বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন

নেপালে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি

নেপালে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি

স্বদেশ ডেস্ক:

ভারতীয় এক ব্যবসায়ী আমাকে প্রধানমন্ত্রী হতে সহায়তা করেছিলেন- এমন মন্তব্য করে তীব্র চাপের মুখে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল ওরফে প্রচণ্ড। তার নিজের মুখ দিয়ে এমন কথা বেরিয়ে আসায় বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয় জাতীয় পরিষদে, প্রতিনিধি পরিষদে। ফলে বুধবার উভয় পরিষদের অধিবেশন মুলতবি করা হয়। জবাবে প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড বলেছেন, তার বক্তব্যকে ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এর ফলেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ খবর দিয়েছে ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই। এতে বলা হয়, ভারতের ব্যবসায়ীকে নিয়ে বিস্ময়কর মন্তব্য করেছেন পুষ্প কমল দাহাল ওরফে প্রচণ্ড। নেপালে উঁচু মানের একজন ভারতীয় উদ্যোক্তা হলেন সরদার প্রীতম সিং।

সোমবার ‘রোডস টু দ্য ভ্যালি: দ্য লিগেসি অব সরদার প্রীতম সিং ইন নেপাল’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন প্রচণ্ড। সেখানে তিনি বলেন, এক সময় তিনি (প্রীতম সিং) আমাকে প্রধানমন্ত্রী হতে সহায়তা করেছিলেন।

তিনি বেশ কয়েকবার দিল্লি সফর করেন এবং কাঠমান্ডুতে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বহু দফা বৈঠক করেন আমাকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে। এছাড়া তিনি ভারত ও নেপালের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করতে বিশেষ ও ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। এ নিয়ে বুধবার নেপালের জাতীয় পরিষদে ব্যাপক হট্টগোল করে প্রধান বিরোধী দল কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (একীভূত মার্কসিস্ট-লেনিনিস্ট)(সিপিএন-ইউএমএল)। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে। 

ফলে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর একটা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করা হয়। এরই মধ্যে বুধবার মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন সিপিএন-ইউএমএল চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তার বক্তব্যের বিপরীতে ব্যাখ্যা চান না। তারা চান তার পদত্যাগ। কারণ, তার মন্তব্য জাতীয় স্বাধীনতা, অখণ্ডতা, সংবিধান এবং পার্লামেন্টের প্রতি আঘাত করেছে। ওদিকে একইভাবে প্রতিনিধি পরিষদে হট্টগোল করে বিরোধী দলগুলো। এর মধ্যে আছে ইউএমএল, রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি (আরপিপি)। এর প্রেক্ষিতে প্রতিনিধি পরিষদের অধিবেশন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। ঘটনার দিন প্রধান বিরোধী দল কমিউনিস্ট সিপিএন-ইউএমএল এবং আরপিপির সদস্যরা স্লোগান দিতে থাকেন। তারা বলেন, নয়া দিল্লি যে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দিয়েছে, তার পদে থাকার অধিকার নেই। নিম্ন কক্ষে বক্তব্যে ইউএমএল এমপি রঘুজি পান্ত বলেন, নৈতিক কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। দিল্লির নিয়োগ দেয়া প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রয়োজন নেই।

শুধু যে বিরোধী দলগুলো প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডের পদত্যাগ দাবি করেছেন এমন না। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের অনেকেও তার ওই মন্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বুধবার প্রতিনিধি পরিষদের অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিশ্ব প্রকাশ শর্মা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য সমালোচনার যোগ্য। তিনি যে মন্তব্য করেছেন তা ভুল। ওদিকে প্রধানমন্ত্রীর দলের অঙ্গ সংগঠন অল নেপাল ন্যাশনাল ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টুডেন্টস ইউনিয়নের একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অনুষ্ঠানে বুধবার বক্তব্য রেখেছেন পুষ্প কমল দাহাল ওরফে প্রচণ্ড। সেখানে তিনি বলেছেন, লেখক কিরণদ্বীপ সাঁধুর লেখা বই ‘রোডস টু দ্য ভ্যালি’ (দ্য লিগেসি অব সরদার প্রীতম সিং ইন নেপাল)- এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য রেখেছেন।

ওই বইয়ে প্রীতম সিং সম্পর্কে লেখক যা লিখেছেন, তিনি তাই বলেছেন। কিন্তু লোকজন তাকে ভুলভাবে ব্যবহার করছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি দেখাতে চেয়েছি- প্রীতম সিং শুধু সামাজিক সেবাখাত এবং পরিবহন ব্যবসায়ই আগ্রহী এমন নয়। একই সঙ্গে তিনি রাজনীতিতেও যুক্ত। নেপালে যখন তাকে (প্রচণ্ড) প্রধানমন্ত্রী বানানো হচ্ছিল তখন তিনি দিল্লির দলগুলোর সঙ্গে তদ্বির করেছেন। সিপিএন-মাওইস্ট সেন্টার সেক্রেটারি জেনারেল গণেশ শাহ বলেন, আমার মতে, নেপালের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে ভারত হস্তক্ষেপ করুক এমন ইঙ্গিত করা উচিত নয় প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু তার উচিত ছিল রাজনীতি এবং কূটনীতি নিয়ে এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877